ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক ,তাকে কারক বলে। একটি উদাহরণের সাহায্যে কারকের সংজ্ঞা সহজেই বোঝানো যায় :
বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর অর্থভাণ্ডার থেকে স্বহস্তে দারিদ্র জনসাধারণকে ধান দিতেন।
ওপরের এই বাক্যটির ক্রিয়াপদ ‘দিতেন’। এই ‘দিতেন’ ক্রিয়াকে অবলম্বন করে নিচের প্রশ্ন ও উত্তরের সাহায্যে আমরা জানব ,বাক্যটির কোন কোন পদের সঙ্গে ক্রিয়ার সম্বন্ধ আছে।
কে দিতেন ? বিদ্যাসাগর (কর্তৃকারক )
কী দিতেন ? ধন (কর্মকারক )
কিসের দ্বারা দিতেন ? স্বহস্তে ( করণকারক )
কাকে দিতেন ? জনসাধারণকে ( নিমিত্তকারক )
কোথাথেকে দিতেন ? ভান্ডার থেকে (অপাদানকারক )
কোথায় দিতেন ? বীরসিংহ গ্রামে (অধিকারণকারক )
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে ,আলোচ্য বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে উপরিক্ত পদগুলির অন্বয় সম্পর্ক আছে।
ক্রিয়ার সঙ্গে ভিত্তি করে কারককে ছ,টি ভাগে ভাগ করা যায়। কারক গুলির নাম যথাক্রমে
১.) কর্তৃ কারক,
২.) কর্ম কারক,
৩.) করণ কারক,
৪.) নিমিত্ত কারক,
৫.) অপাদান কারক,
৬.) অধিকারণ কারক।
কারকের সঙ্গে বিভক্তি – অনুসর্গ অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। সুতরাং বিভক্তি এবং অনুসর্গ সম্বন্ধে একটু আলোচনা করে নেওয়া যাক।
বিভক্তি
যেসমস্ত চিহ্ন পদের সম্বন্ধ এবং বচন পুরুষের পার্থক্য বোঝাবার জন্য নামপদ ও ধাতুর সঙ্গে বসে,তাদের বিভক্তি বলে। বিভক্তি চিহ্ন হলো শব্দ বা ধাতুর হাতে বাক্যে প্রবেশ লাভের ছাড়পত্র। বিভক্তির কাজ হলো শব্দের সঙ্গে বসে নামপদ সৃষ্টি করা আর ধাতুর সঙ্গে বসে ক্রিয়াপদ তৈরী করা। বিভক্তি সাধারণভাবে দুরকমের –
১.) নাম-বিভক্তি বা শব্দ-বিভক্তি ,
২.) ক্রিয়া-বিভক্তি বা ধাতু-বিভক্তি।
১.) নাম-বিভক্তি বা শব্দ-বিভক্তি : – যে সমস্ত চিহ্ন শব্দের সঙ্গে বসে অর্থাৎ বিশেষ্য,সর্বনাম বা বিশেষ্যার্থক বিশেষণ শব্দে প্রযুক্ত হয় ,তাকে বলে নাম বা শব্দ বিভক্তি। যেমন- (ডাক্তার+কে )
ডাক। এখানে ‘ডাক্তার’ নাম শব্দের সঙ্গে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
২.) ক্রিয়া-বিভক্তি বা ধাতু-বিভক্তি : – ধাতুর উত্তরকাল ও পুরুষ অনুসারে যে সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন বিভক্তি হয় ,তাদের ক্রিয়া বা ধাতু বিভক্তি বলে। যেমন – আমি ব্যাকরণ পারিতেছি। (পড়+ইতেছি) পরিতেছি ,ক্রিয়াপদটিতে ‘পড় ‘একটি ধাতু। এই ধাতুর সঙ্গে ‘ইতেছি ‘ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
শূন্যবিভক্তি : – বাংলা ভাষায় বিভক্তি চিহ্ন মাত্র পাঁচটি -এ,কে,রে(কেবল কবিতায় ) ,তে(এতে ) র (এর);এগুলির মধ্যে র (এর )সম্বন্ধ পদের নিজস্ব চিহ্ন ;তাহলে ছয়টি কারকের জন্য অবশিষ্ট রইলো মাত্র চারটি বিভক্তি চিহ্ন। অতএব দেখা যাচ্ছে যে ,বাংলাভাষায় শব্দবিভক্তি চিহ্নের নিদারুন অভাব। এই অভাব -পূরণের জন্য বাংলা ভাষা একটি অমূল্য পন্থা আবিষ্কার করেছে। শুন্য বিভক্তির প্রয়োগ সেই অভিনব আবিষ্কার।
যে শব্দ বিভক্তি চিহ্নটি শব্দে যুক্ত হয়ে শব্দটিকে পদে পরিণত করে নিজে অপ্রকাশিত থাকে ,তাকে শূন্যবিভক্তি বলা হয়। শূন্যবিভক্তি যোগে মূল শব্দটির কোনো পরিবর্তনই হয় না। যেমন- ‘পাগল কিনা বলে।’-এই বাক্যে ব্যবহৃত ‘পাগল’ (পাগল+অ )শব্দে ‘অ’ বিভক্তি রয়েছে ; যেহেতু ‘অ’ দৃশ্যমান নয়,তাই একে শূন্যবিভক্তি বলা হয়। কারক-বিভক্তি নির্ণয়ে শূন্য-বিভক্তির ভূমিকাই বেশি।
অনুসর্গ : – বাংলা ভাষা আরেকটি উপায়েও শব্দবিভক্তি চিহ্নের অভাব কিছুটা পরিমানে মেটানো যায়। সেই উপায়টি হলো অনুসর্গ।
যে-সকল অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে আলাদা ভাবে অবস্থান করে শব্দবিভক্তির কাজ করে তাদেরকে অনুসর্গ,পারসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে।
দ্বারা,দিয়া ,কর্তৃক,সাহায্যে,নিমিত্ত,জন্যে ,তরে,হেতু,হইতে,থেকে,কাছে,চেয়ে,অপেক্ষা,অবধি,
মধ্যে,মাঝে,উপর,ভিতর ,প্রতি,ভিন্ন,বিনা ,সনে প্রভৃতি হলো অনুসর্গ।
অনুসর্গ বাক্যে প্রয়োগ : –
১.) সকালের তরে সকালে আমরা।
২.) সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
৩.) ছুরি দিয়ে পেন্সিলটা কাটো।
৪.) সেই অবধি এখানে বসে আছি।
৫.) যুদ্ধ বেঁধেছে ওই কৌরব সনে।
নির্দেশক : – বিভক্তি চিহ্নের মতো নির্দেশক ও শব্দের অন্তে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত থাকে ,শব্দের পরে সতন্ত্র ভাবে বসে না। নির্দেশকটি ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা পরিমান নির্দেশ তো করেই ,উপরন্তু ব্যক্তি বা বস্তুটিকেও বিশেষ ভাবে নির্দেশ করে। এবং সংখ্যা বাচক বা পরিমান বাচক বিশেষণের সাথে যুক্ত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে শব্দের আগেও বসে থাকে। যেমন-
ক.) গোরুগুলিকে একটু দেখিস ,মা।
খ.) খানআষ্টেক লুচি আন্তে বলুন।
গ.) একখানি ছোটো ক্ষেত,আমি একা।
কারক
বাক্যের ক্রিয়ার সাথে বাক্যন্তর্গত বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক ,তাকে কারক বলে। এই সম্পর্ক প্রধানত ছয় প্রকার বলে কারক ও ছয়টি -কর্তৃ,কর্ম,করন,সাম্প্রদান,অপাদান ও অধিকরণ। মানে রাখবে ,কেবল বিশেষ্য ও সর্বনাম পদেরই কারক হয়। তবে ,বিশেষণপদ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হলে তার ও কারক হবে।
ক) কর্তৃকারক: –
যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ বাক্যস্থিত ক্রিয়া সম্পন্ন করে বা করায়,তাকে বাক্যের কর্তা বলে। কর্তা বাক্যস্থিত অন্য পদ থেকে পৃথক বা নির্লিপ্ত থেকে,কেবলমাত্র ক্রিয়ার সঙ্গে মিলিতভাবে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। সুতরাং বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে কতৃসম্বন্ধযুক্ত নামপদকে
(নামপদ বলতে বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই বোঝায় )কতৃকারক বলে। যেমন –
পথিকরা বিশ্রাম করছে। (পথিকরা )।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। (শিশুগণ )।
কর্তা নানাপ্রকারের হয়ে থেকে। যেমন-
১.) উক্ত কর্তা : – কর্তৃবাচ্যের কর্তায় শূন্য বিভক্তি হলে তাকে উক্ত কর্তা বলে। যেমন –
রামচন্দ্র লক্ষ ভেদ করলেন।
২.) অনুক্ত কর্তা : – কর্মবাচ্যের বা ভাববাচ্যের কর্তাই অনুক্ত কর্তা। কতৃপদে দ্বারা,দিয়া,কতৃক,
কে,রে প্রভৃতি যোগ হলে অনুক্ত কর্তা হয়। যেমন- ব্যাঘ্র কর্তৃক নবকুমার হাত হয়েছে।
৩.) নিরপেক্ষ কর্তা :- বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা যদি পৃথক হয় ,তবে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। যেমন- সূর্য উঠলে আমরা বিছানা ছাড়লাম।
৪.) প্রযোজক কর্তা :- যে অপরকে দিয়ে কাজ সম্পাদন করায়,তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
যেমন- শচীন শিক্ষার্থীদের ব্যাটিং শেখাচ্ছেন। এখানে ‘শচীন’ হলো প্রযোজক কর্তা।
৫.) প্রযোজ্য কর্তা : – প্রযোজক কর্তা যাকে দিয়ে কাজ করায় অর্থাৎ অপরের প্রেরণায় যে কাজ
করে ,তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন – মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এখানে ‘ শিশু’ হলো প্রযোজ্য কর্তা।
৬.) সমধাতুজ কর্তা : -যদি একই ধাতু থেকে বাক্যের প্রধান ক্রিয়াপদ এবং তার কর্তা গঠিত হয় ,
তবে তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে। যেমন- পাপের ফল এমন চমৎকার ভাবেই ফলে।
৭.) ব্যতিহার কর্তা : – ক্রিয়ার দুটি কর্তা যদি পরস্পর একই কাজ করে ,তবে দুটি কর্তাকেই
ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন – ছেলেটিকে নিয়ে জমে মানুষে টানাটানি করছে।
৮.) সহযোগী কর্তা : – যখন একাধিক কর্তার মধ্যে পারস্পারিকতাবিহীন ভাবে কোনো কাজ করা
হয় ,তখন তাদের সহযোগী কর্তা বলে। যেমন- এখানে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়।
খ) কর্মকারক : –
ক্রিয়ার সঙ্গে নাম পদের কর্ম-সন্বন্ধকে কর্মকারক বলে। অর্থাৎ বাক্যে কর্তা যা করে ,তাই কর্মকারক। কর্মকারকে সাধারণত কে,রে বিভক্তি যুক্ত হয়। বহু বাচনে দের,গুলিকে, দেরকে ব্যবহৃত হয়। যেমন- “মোর অশ্রু তোমারে কাদায় “।
অতিথিদের সন্মান কারো।
কর্মের ও বিভিন্ন প্রকার ভেদ আছে। যেমন-
১.) উক্ত কর্ম:- কর্মবাচ্যে যে কর্ম থাকে ,তাকেই উক্ত কর্ম বলে। যেমন –
মেঘনাথবধ কাব্য মধুসূদন কতৃক রচিত।
২.) অনুক্ত কর্ম :- কতৃবাচ্যে যে কর্ম থাকে ,তাকেই অনুক্ত কর্ম বলে। যেমন- গরু দুধ দেয়।
৩.) মুখ্য কর্ম :- সকর্মক ক্রিয়ার যদি দুটি কর্ম থাকে ,সেই কর্ম-দুটির মধ্যে যে কর্মটি বস্তু বা বিষয় বাচক অর্থাৎ অপ্রাণী বাচক ,সেই কর্মটিই মুখ্যকর্ম।
যেমন-মাননীয় মুখ মন্ত্রী পুলিশটিকে পুরস্কার দিলেন।
৪.) গৌণ কর্ম :- সকর্মক ক্রিয়ার যদি দুটি কর্ম থাকলে,সেই কর্মমধ্যস্থ ব্যক্তিবাচক অর্থাৎ প্রাণীবাচককর্মটিকে গৌণকর্ম বলে।
যেমন- মুখ্য কর্মের উদাহৃত বাক্যটিতে পুলিশটিকে শব্দটি গৌণকর্মের উদাহরণ।
৫.) উদ্দেশ্য কর্ম :- সমার্থক ক্রিয়ার দুটি কর্মের মধ্যে যাকে উদ্দেশ্য করে অন্যটির দ্বারা কিছু বলা হয় ,তাকে উদ্দেশ্য কর্ম বলে। যেমন – তোমাকে হারিয়ে তাকে নেওয়া যায়না।
৬.) বিধেয় কর্ম :- উদ্দেশ্য-কর্মের পরিপূরক রূপে যে কর্মের বিধান হয় ,তাকে বিধেয় কর্ম বলে।
যেমন- বিদ্যাসাগরকে দয়ার সাগর বলা হয়।
৭.) সমধাতুজ কর্ম :- যখন ক্রিয়া ও কর্ম একই ধাতু থেকে নিস্পন্ন হয় ,তখন সেই কর্মকে সমধাতুজ কর্ম বলে। যেমন- আর মায়া কান্না কাঁদিসনে বাপু।
গ) করণ কারক : –
বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে কারণ-সম্বন্ধযুক্ত নামপদকে করণ কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যে কর্তা যা দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করে ,তাই কারণকারক। এবং ক্রিয়াকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় ,তাই কারণ কারকের পদ। করণকারকে সাধারণত দিয়ে,দ্বারা ,কতৃক প্রভৃতি অনুসর্গ যুক্ত হয়। বহুবচনে দের,দিয়ে ,দিগের ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
যেমন- মহারাজ ঋষিদের দ্বারা যজ্ঞ আরম্ভ করাইলেন।
“ওসে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। ”
বিভিন্ন অর্থে কারণ কারক হয়ে থাকে। যেমন –
১. ) যন্ত্রাত্মক করণ :- কোনো যন্ত্রের সাহায্যে অর্থাৎ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য স্থুল বস্তুর সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন হলে, তাকে যন্ত্রাত্মক কারণ বলে। যেমন – রঙিন চশমায় সবকিছুই রঙিন হয়।
২.) উপায়াত্মক করণ : – কোনো ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য স্থুল বস্তুর সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন না হয়ে যদি অন্য উপায়ে হয় ,সেই উপায়টিকে উপায়াত্মক করণ বলে।
যেমন – অন্তর যাদের ঘৃনায় পূর্ণ ,তারা করবে জনকল্যান ?
৩.) হেতুময় করণ : – যে করনকারকে হেতু অথবা কারণ বোঝায় ,তাকে হেতুময় করণ বলে।
যেমন – রাবন পুত্র শোকে কাতর হয়ে রামের বিরুদ্ধে রণসজ্জা করলেন।
৪.) কালাত্মক করণ :- যে করণকারকে এমন কাল বোঝায় যা ফলপ্রাপ্তি ঘটায়,তাকে কালাত্মক করণ বলে। যেমন – ‘আমরা এক বেলায় সাত এত দিনের পথ আসিয়া পড়িয়াছি।
৫.) উপলক্ষণাত্বক করণ :- যে করণকারকে কোনো উপলক্ষন বা চিহ্ন বোঝায় ,তাকে উপলক্ষণাত্বক করণ বলে। যেমন – ‘বালক বীরের বেশে তুমি করলে বিশ্বজয়। ‘
৬.) সমধাতুজ করণ :– যখন একই ধাতু থেকে করণ ও ক্রিয়া নিস্পন্ন হয় ,তখন সেই করণটিকে সমধাতুজ করণ বলে। যেমন- পৃথিবী আমাদের কি মায়ার বাঁধনেই না বেঁধেছে।
ঘ) নিমিত্ত কারক :-
ক্রিয়া পদকে ‘কিসের উদ্দেশ্যে’ বা ‘কিসের জন্য’ প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই নিমিত্ত। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে নিমিত্ত সম্বন্ধ বোঝালে নিমিত্তকারক হয়। নিমিত্তকারকে সাধারণত জন্য, নিমিত্ত,উদ্দেশ্যে, তরে ইত্যাদি অনুসর্গ এবং কে,এ ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়।
যেমন – আধুনিক মাইনে দিতে হবে।
তুমি কি টিকিটের জন্য সৌরভের বাড়ি যাচ্ছ ?
‘ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। ‘
ঙ) অপাদান কারক : –
ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের অপাদান-সম্বন্ধকে অপাদানকারক বলে। অর্থ্যাৎ যা থেকে কোনো কিছুর উৎপত্তি ,বিচ্ছেদ ,বিচ্যুতি ,চলন,পতন,নির্গমন,ভয় ইত্যাদি ঘটে,তাকে বলে অপাদান।ক্রিয়াকে ‘কোথা থেকে’,’কিসের থেকে’ প্রশ্ন করলে অপাদান কারকের পদ পাওয়া যায়। অপাদান সাধারণত থেকে,হতে,হইতে,অনুসর্গ যুক্ত হয়। বহুবচনে দিগ্ হইতে,দের অপেক্ষ্যা,দের চেয়ে ব্যবহৃত হয়।
যেমন- রাজকন্যা সোনার থালায় খান।
“মুখের গ্রাস মুখ হইতে পড়িয়া যাইতেছে। ”
অপাদান নিম্নলিখতো কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে –
১.) স্থানবাচক বা অপাদান : – কোনো স্থানথেকে বিশ্লেষ বা চ্যুত বোঝালে স্থানবাচক অপাদান হয়।
যেমন – শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিং মেল্ ছারে।
২.) কালবাচক অপাদান :- কাল বা সময় বোঝালে কালবাচক অপাদান হয়।
যেমন- তিনি রাত ন,টা থেকে গান গেয়ে চলেছেন।
৩.) দূরত্ববাচক অপাদান : – কোনো স্থানথেকে দূরত্ব বোঝালে দূরত্ববাচক অপাদান হয়।
যেমন – “মালা হতে ভেসে আসা একটি ফুলের দল। ”
৪.) তারতম্যবাচক অপাদান :- দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে তুলনা বোঝালে তারতম্যবাচক অপাদান হয়। যেমন- জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
৫.) আধারবাচক অপাদান :- কোনো আধার থেকে বিচ্যুতি বোঝালে আধারবাচক অপাদান হয়।
যেমন – করাই থেকে দুধ উথলে পড়লো।
৬.) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান :- কোনো অসমাপিকা ক্রিয়া থেকে বিশ্লেষ বোঝালে
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান বলে। যেমন – হঠাৎ তিনি বলতে বিরত হলেন।
চ) অধিকরণ কারক :-
ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের অধিকরণ-সম্বন্ধকে অধিকরণ কারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়া-সংঘঠনের স্থান,কাল,বিষয়,অবস্থা ইত্যাদি -এককথায় ক্রিয়ার আধারই হলো অধিকরণ।এবং ক্রিয়াকে কোথায় ,কখন,কবে দিয়ে প্রশ্ন করলে অধিকরণ কারকের পদ পাওয়া যায়।অধিকরণ কারকে সাধারণত এ,য়,তে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন – ভোর পাঁচটায় ওঠার চেষ্টা করবে।
শ্রীরামচন্দ্র তপোবনে অত্রিমুনির কাছে গেলেন।
অধিকরণ কারক প্রধানত তিন প্রকার –
১.) স্থানাধিকরন :- যে স্থানে বা আঁধারে ক্রিয়া সম্পূর্ণহয় ,তাকে স্থানাধিকরন বা বিষয়াধি করণ বলে।
যেমন -পুণ্যতীর্থে স্নান ক’রে দেহমন পরিশুদ্ধ হ’ল।
২.) কালাধিকরন :- যে সময়ে কোনো ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় ,সেই সময়বাচক পদটি কালাধিকরন। যেমন- মধ্যাহ্নে নিদ্রিত হয়োনা।
৩.) ভাবাধিকরন :- এই করণে কোনো ‘ভাব’ সূচিত হয়। যখন একটি বাক্যে দিতি ক্রিয়ার একটি অন্য ক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল ,তখন সেই নির্ভরশীল ক্রিয়াটি ভাববাচক বিশেষ্যে পরিণত হলে
ভাবাধিকরন হয়। যেমন- পশ্চিমাকাশে মেঘোদোয়ে নৌকার মাঝি চিন্তিত হলো।
অকারক পদ :-
দেবশ্রী গরাদের শাড়ি পড়েছে।
গ্রীষ্মের ছুটিতে বেনারস যাবো।
আমরা ইতি মধ্যে জেনেছি যে,ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের যে সম্বন্ধ ,সেই সম্বন্ধটিই কারক। কিন্তু ওপরের উদাহরণে লক্ষ করলে দেখাযাবে ক্রিয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্বন্ধ নেই সুতরাং এই পদগুলি কারক নয় ।তবে ক্রিয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্বন্ধনা থাকলেও দেখাযাচ্ছে বাক্যের বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সম্বন্ধ রয়েছে। তাই এই জাতীয় পদকে বলে অকারক পদ।
অকারক পদ দুই রকম -সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ।
সম্বন্ধ পদ:– যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সম্বন্ধ থাকে -কিন্তু
ক্রিয়ার সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ থাকেনা,তাকে সম্বন্ধ পদ বলে।নামপদকে ‘কার’ বা ‘কিসের’ দিয়ে প্রশ্ন করলে সম্বন্ধ পদ পাওয়া যায়। যেমন- সমীর বনের মধ্যে প্রবেশ করলো। এই বাক্যে ‘বনের’ সঙ্গে ‘মধ্যে’র সম্বন্ধ রয়েছে।সুতরাং ‘বনের’ পদটি হলো প্রকৃতপক্ষে সম্বন্ধ পদ। এইরূপ নাম পদকে বলে সম্বন্ধ পদ।
সম্বোধন পদ :- সম্বোধন পদ আর একটি অকারক পদ। বাক্যের সঙ্গে সম্বোধন পদেরও কোনো কারকগত সম্বন্ধ নেই।বাক্যের গতিভঙ্গ করে যাকে বিশেষ ভাবে আহ্বান করা হয়,তাকে সম্বোধন পদ বলা হয়।সম্বোধন কথার অর্থ হলো ডাকা বা আহ্বান করা। সম্বোধনে মূল শব্দের কোনো পরিবর্তন হয় না। সম্বোধন পদ বিভক্তি হীন।কমা বা বিস্ময়বোধক চিহ্ন দিয়ে সাধারণত সম্বোধন বোঝানো হয়। সম্বোধন পদ চরিত্র গত ভাবে অব্যয়।
যেমন – হ্যাঁরে, তোর নাকি মাঘ মাসে বিয়ে।
ওরে কেষ্টা,একটু চা দিয়ে যা।
ওগো, একটু জল খাবার দাও।
“মা, আমায় মানুষ কর।”